“লিক ইট অফ; লিক ইট অল অফফ!”
যন্ত্রণা, পিপাসা, আরও কী কী যেন মিশে শব্দগুলোর সঙ্গে।
চার্চের ভিতরের আলোআঁধারি আর্চ দেওয়া সিঁড়ির তলায় ঘুরতে ঘুরতে হাস্কি পুরুষকণ্ঠের আর্তস্বর শুনে এগিয়ে গিয়েছিল সঞ্চারী।
একটা জংধরা লোহার পাত লাগানো পুরোনো কাঠের দরজার ফাঁকে চোখ রেখে নিজের অজান্তেই শ্বাস টেনে নিয়েছিল লম্বা করে।
ছোট্ট ঘরটা। গোল টুলের ওপর কাঠের বাতিদানে রাখা মোমবাতির আলোয় ফুটে উঠেছে একটা ঘামে ভেজা চকচকে চওড়া পিঠ, নিচের দিকে ঢালু হয়ে নামা সরু কোমর, আরও নিচে সুগোল নিতম্বের খাঁজ, পেশিবহুল এক জোড়া লম্বা পুরুষালি পা। মুখোমুখি একটু সামনের দিকে ঝুঁকে একটা কাঠের চৌকিতে বসে আছে অলিভরঙা সুন্দরী। একটু তেকোনা মুখের ছাঁদ। লম্বা লম্বা হাত পায়ের টান। খয়েরি গোছের একরাশ চুল মাথার ওপর দিকে এলোমেলো খোঁপায় আটকানো। বড় বড় পাপড়িতে ঘেরা দীঘল চোখ জোড়া নিষ্পলক হয়ে আটকে আছে সামনের অনাবৃত পুরুষ শরীরে। একদৃষ্টে চেয়ে আছে মেয়েটা। পলক পড়ছে না। নিশ্বাসও বন্ধ বুঝি। উত্তপ্ত তীব্র দৃষ্টি দিয়েই যেন লেহন করে নেবে সামনের উন্মুক্ত শরীরটাকে। পাতলা লাল চামড়ায় ঢাকা খাঁজকাটা এক জোড়া ঠোঁট একটু ফাঁক হয়ে গেছে। ঠোঁটের ওপরে, ঠিক মাঝখানের খাঁজ বরাবর মুক্তোর মত ঘামের বিন্দু।
সামনের পুরুষালি শরীরটি মসৃণ। ঘামে ভিজে চকচক করছে।
কন্যার হাতে পলকাটা কাঁচের বাটি। সোনালি রঙ টলটল করছে তাতে। ঠিক তরল নয়। একটু ঘন কিছু। সামনের নিখুঁত উন্মুক্ত পুরুষ শরীরটি থেকে চোখ না সরিয়েই সে ডান হাতের আঙুলগুলো চুবিয়ে দিয়েছে সেই সোনারং বস্তুটায়। আঙুলগুলো তুলে নিয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিতেই, হাত বেয়ে গড়াতে লাগল চটচটে সোনা। খাঁটি মধু।
একটানে তর্জনী আর মধ্যমার গড়ানো মধু সামনে দাঁড়ানো পুরুষটির শরীরের মাঝবরাবর সরল রেখায় মাখিয়ে দিয়েই, আস্তে আস্তে ঠোঁটের কাছে আঙুলগুলো নিয়ে এল মেয়ে। পুরুষটির চোখে চোখ রেখে আস্তে আস্তে চেটে নিতে লাগল নিজের আঙুলগুলো। লাল টুকটুকে জিভের ডগায় গড়িয়ে পড়া নেশা লেপটে যাওয়ার সঙ্গেই ভেসে এল আর্ত পুরুষকণ্ঠ, “আহ মারিয়া…”
নিজের বুকের ঢিপ ঢিপ শুনতে শুনতে সঞ্চারী ভাবল, “মধু? কী উর্বর ভালোবাসার মস্তিষ্ক রে…”
গোয়ার পুরোনো চার্চের ভিতর দাঁড়িয়ে ছিল সঞ্চারী। ইতিহাসের ছাত্রী। কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে এসেছে গোয়া। এডুকেশানাল ট্যুর।
পনেরো-শ শতাব্দী থেকে পর্তুগিজদের নজর গোয়ার ওপর। যুদ্ধপিপাসু এলবুকার্ক বারে বারে ফিরে এসেছে সৈন্য, আর্মাডা, কামান নিয়ে। আদিল শাহি, বিজাপুরী মুসলমান শাসকদের সঙ্গে এদের লড়াই চলেছে বছরের পর বছর। ধর্মের বিভেদে বিক্ষুব্ধ স্থানীয় কোঙ্কনি হিন্দুরা গোপনে হাত মিলিয়েছে এই বিদেশিদের সাথে। তারা ভেবেছিল মুসলমানদের চেয়ে এরা ভালো।
আর পর্তুগিজ ভেবেছে, আহা সোনাদানা, মুক্তো, হিরে, সোনার চেয়ে দামি মশলার বাহার আর অজস্র সুন্দরী নারী। এমনি করেই হার্মাদ নিষ্ঠুর পর্তুগিজদের পোক্ত ঘাঁটি হয়ে উঠেছে গোয়া দমন দিউ। একেক বারের আক্রমণের পর এরা বীভৎসভাবে খুন করেছে মুসলমান পুরুষদের। হিন্দুরাও ছাড় পায়নি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। আর মেয়েমানুষদের তুলে নিয়ে গিয়ে জাহাজের ভিতর খাঁচায় ভরে রেখেছে পোষা জন্তুর মতো। যুদ্ধে জেতার পর দিন চারেক করে নাবিক, সৈনিকদের ক্ষুধার্ত কুকুরের দলের মতো শহরের ওপর ছেড়ে দিয়েছে সেনাপতি।
যাও, যা ইচ্ছে করে এসো, যা পারো লুটে নাও।
আদিল শাহ, পেশোয়া, বিজাপুরী সুলতান কেউই এদের সঙ্গে পেরে ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত জিতে গেছে পর্তুগিজরাই। শহর দখল করে এদেশের সমস্ত সোনা রুপো তামা গলিয়ে নিজেদের মুদ্রা বানিয়ে ফেলল এরা। গোয়া দমন দিউ মিলিয়ে তৈরি হল পর্তুগিজ কলোনি। হেরে যাওয়া মানুষগুলোকে মেরে পিটে ক্রীতদাস বানিয়ে কায়েম করে ফেলল রাজত্ব।
পশ্চিমের আরব সাগরের তীর, পাশ্চাত্যের সঙ্গে জলপথে বাণিজ্য, রয়ে গেল এদের হাতের মুঠোয়।
পশ্চিমঘাট পর্বত। সহ্যাদ্রির রুক্ষ সৌন্দর্য। মান্ডভির জলে ভাসা আম নারকেলের অজস্র সবুজ। লাল মাটিতে সোনার চেয়েও দামি মসলার সুগন্ধি ফলন। এদেশের মানুষের ঘরে অপর্যাপ্ত হিরে, চুনি, পান্না।সবই পৌঁছল বিদেশি কোষাগারে। সমস্ত সমুদ্রতীর জুড়ে তৈরি হল কেল্লা, লাইট হাউস। শাসকরা নিরাপদ করল নিজেদের। ছাপোরা বিচের পাশে পুরোনো ফোর্ট, কান্ডলিম বিচের পাশে ফোর্ট আগুয়াডা, কেল্লার সাথে পুরোনো লাইট হাউসে পুরোনো গল্পের হাতছানি। এমন অজস্র দুর্গ চারদিকে।
এমনি করেই থেকে গেল পর্তুগিজরা। সঙ্গে নিয়ে এল উদ্দাম লালসা, বুল ফাইটের রক্ত লাল উন্মাদনা, মদের ফোয়ারা আর ক্রিশ্চান পাদ্রীদের।
চার্চ তৈরি হল। চার্চের ওপরদিকের শিক্ষিত মানুষেরা অনেকেই রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজে লিপ্ত রইলেন। চারপাশের দেশি মানুষ চার্চে যেতে লাগল খাদ্য আর আশ্রয়ের আশ্বাস পেয়ে। মিশে যেতে থাকল ভারতীয় রক্তের সঙ্গে পর্তুগিজ জিন।
চার্চের আধিপত্য সেকালের রাজাগজাদের থেকে তো কম কিছু ছিল না। চার্চের সম্পত্তি, প্রতিপত্তি, প্রয়োজনে যুদ্ধ করার শক্তিকে সমঝে চলত সবাই। গোয়াতেও তৈরি হল একের পর এক বিশাল দুর্গের মতো প্রাসাদ। চার্চ অফ সেইন্ট কাজেতান, চার্চ অফ সেইন্ট ফ্রান্সিস অফ আসিসি, ব্যাসিলিকা অফ বম যিশাস, আওয়ার লেডি অফ ইম্ম্যাকুলেট কন্সেপশান চার্চ, সে ক্যাথিড্রাল, চ্যাপেল অফ সেইন্ট ক্যাথেরিন, চার্চ অফ লেডি অফ রোজারি, মন্টে হিল চার্চ, চ্যাপেল অফ সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার, আবার সেন্ট আলেক্স চার্চ, যা কিনা সরাসরি রাবালনাথের হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে। জোর যার মুলুক তার। কত যে সোনা রুপোর ছড়াছড়ি চার্চের ভেতর। অল্টারের উপাসনা বেদীতে, দেওয়ালে, বিশাল উঁচু হলের ফ্রেস্কো করা সিলিঙে।
ভারতবর্ষ স্বাধীন হবার পরেও গোয়ায় পর্তুগিজ শাসন চলেছে বহুদিন। প্রায় পনেরো বছর পর গোয়া ফিরে এসেছে দেশের কাছে। এই যে বহু-বহুদিন পর্তুগিজ শাসন ছিল গোয়াতে, তার কলোনিয়াল গন্ধ এখনও ঘুরে বেড়ায় এ শহরের আকাশে বাতাসে। সব জায়গায় সেই ছোঁয়া। পুরোনো ঢালু টালির ছাদের বাংলোয়। রাতের সুন্দর কাঁচের লন্ঠন জ্বালানো বারান্দার টেবিলে। ফেনির গ্লাসের সঙ্গে ম্যাকারেল ভাজার প্লেটে। পিয়ানোর গানের সুর আর গিটারের টুংটাংসহ প্রেমের গানে। পাশের সমুদ্রের ঢেউ ছুঁয়ে আসা নোনতা মিঠে হাওয়ার উদ্দাম এলোমেলো শিরশিরানিতে।
গোয়া। বিদেশিনী ধাঁচের সুন্দরী গোয়া। কালঙ্গুট, মিরামার বিচে মুম্বাই সিনেমাশুটের গল্প ছড়ানো মোহময়ী লাস্যে উজ্জ্বল। রঙিন রোমান্সে টলমল গোয়া। বিদেশি মানুষের ভিড়ে ভর্তি হয়ে থাকা গোয়া। এখানে রাস্তায় ঘাটে স্কার্ট, ফ্রক, সারং, হট প্যান্টস বেশি। দেশি পোশাক কম। জামাকাপড় এখানে বাহুল্য। সামাজিক বন্ধনও এখানে শিথিল।
গোয়ার সমুদ্রের কত রূপ। একদিকে আরামবোল, মান্দ্রেম, ভাগাতোরের হিপ্পি উল্লাস, নাইট স্পট, হাওয়াইয়ান ফ্যাশান, সি ফুডের বাহার। অন্যদিকে কোথাও রাশিয়ান কালচারের খানাপিনা, কোথাও রক ফেস্টিভাল।
নেশার নানা চেহারা। উচ্ছল বাঁধনহীন উল্লাসের ঘোড়া ছোটানো অজস্র বার, ভিলা, রঙিন পিছুডাক। সারা পৃথিবীর মানুষ বাঁধন ছেঁড়ার আস্বাদ পেতে ছুটে আসে গোয়ার সমুদ্র পাড়ে।
কলকাতার ইতিহাসের ছাত্রছাত্রীরা অবশ্য পুরোনো ঐতিহ্য, ফ্রেঞ্চ-পর্তুগিজ স্থাপত্য, চার্চ, কোঙ্কনি মানুষের সঙ্গে এদেশের সাংস্কৃতিক মিশেল, এইসব ছুঁয়ে ছেনে দেখতে এসেছে। সমুদ্রস্নান আর শপিং-এর চেয়ে এসবের টান এদের কাছে বেশি। এরা নেশাপত্রর এক্সপেরিমেন্টে মন দেয়নি। টপলেস বিচে যাবারও রুচি নেই এদের। পর্তুগিজ মানুষদের পাড়া, বাড়িঘর, চার্চ, সরাইখানা– এইসব দেখে বেড়াচ্ছে রোজ। দুজন টিচার এসেছেন এদের সঙ্গে। লোকাল গাইডদের কাছ থেকেও পুরোনো গল্প, স্থানীয় ঘটনা জেনে নিতে বলছেন স্যাররা। আফটার অল, ওরাই তো জীবন্ত ইতিহাসের বই।
ট্যুর বাসটা দুপুর নাগাদ এই স্পটে এসে থেমেছে। চড়া রোদ। বেশিরভাগ ছেলেমেয়ের মাথাতেই টুপি। চোখে কালো চশমা। ক্যামেরা নিয়ে ঢুকতে বারণ করলেন মাস্টারমশাইরা। স্পেশাল পারমিশান ছাড়া ভিতরে ছবি তোলা বারণ।
পুরনো চার্চের উপাসনাকক্ষে সোনায় মোড়া অল্টার বেদীর চারপাশে ভিড় করে ছিল বন্ধুরা। বিরাট হল। আর কত উঁচু।
সোনার সিংহাসন। রুপোর ভারী কাজকরা মোমদান, বাসনপত্র। সোনার চেয়েও দামি কাঠের জানালা, খিলান। ভেনেশিয়ান গ্লাসের বিশাল বিশাল আয়না। অনেক লম্বা লম্বা জানালা আর কার্নিশের ওপরের দিকে ডোমে রঙিন কাঁচের টুকরো দিয়ে তৈরি অজস্র নকশা, বাইবেলের নানা ঘটনার ছবি। স্যার বললেন স্টেইন্ড গ্লাশ।
একটা কালো কাঠের লম্বাটে বাক্স দাঁড় করানো ছিল একপাশে। পাশে আবার কাল কাপড়ের পর্দার মতন কী একটা ঝুলছে। সঞ্চারীরা জিগ্যেস করতে, ওদের শিক্ষকদের আগেই লোকাল গাইড ভদ্রলোক বলে উঠলেন, “কনফেশান। কনফেশান। ইট ইজ দ্য কনফেশান বক্স।”
সবাই দারুণ কৌতূহলী হয়ে চলে এল এ বস্তুটা দেখতে।
এবার স্যর বুঝিয়ে বললেন, বাক্সটার ভিতরে দাঁড়াবার জায়গা আছে। দুজন মানুষ দাঁড়াতে পারে এর মধ্যে। একজন, যে কোনও অপরাধ করেছে। যার অনুশোচনা হয়েছে বলে বিবেকের দংশনে ছুটে এসেছে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে। অন্যজন ঈশ্বরের প্রতিনিধি কোনও ধর্মযাজক। বাইবেল বলেছে পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়। এখানে নিজের পাপের কথা স্বীকার করে পাদ্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে অনেক সাধারণ ধর্মভীরু মানুষ নিশ্চিন্ত হয়ে ঘরে ফিরত। তাদের গ্লানি জমা থাকত চার্চের কাছে।
সবাই ঘুরে ফিরে দেখতে থাকে এই বাক্সটা। আর এর চারপাশের জিনিসপত্র।
এক ফাঁকে সঞ্চারী পায়ে পায়ে বেরিয়ে এল বিশাল প্রাসাদের মতো বাড়িটার আনাচকানাচগুলো একা ঘুরে দেখবে বলে। পুরোনো সময়কে ছোঁয়ার চেষ্টা করাটা ওর নেশা।
হলদে খয়েরি পাথরের বিশাল প্রাসাদ। অনেকটা দুর্গের মতো। পুজোর বেদী, প্রার্থনার হল ছাড়াও কত কত ঘর, প্যাসেজ চারদিকে। অলিগলি রাস্তারা কোথায় কোথায় গেছে? বাইরের বড় দরজাটাও দুর্গের দরজার মতোই। তিন-চার মানুষসমান উঁচু, ভারী কাঠের। বাইরে লোহার পাত লাগানো। তার ওপর একহাত লম্বা লম্বা মোটা লোহার পেরেক গাঁথা। আক্রমণ ঠেকানোর জন্যেই নিশ্চয়ই। হবে না। কত সোনা রুপো দামি জিনিস ঠাসা ভিতরে। আগে তো আইনি ক্ষমতাও প্রচুর ছিল। রাজাগজাদের মতোই তো ছিল চার্চের লোকেরাও।
দরজার ভিতরের দিকে মোটা কাজ করা রুপোর পাত। একটা বড় প্যাসেজ পুরো চার্চের তোলাটা ঘিরে এসেছে। ওইটা ধরে হাঁটলে প্রদক্ষিণ করে আসা যায় সবটা। ওর সামনের ভাগটাতেই বড় তামার বেদি। সেখানে অজস্র মোমবাতি জ্বলছে। দরজার বাইরে গরিব কোঙ্কনি মেয়ে বাচ্চারা মোম হাতে দাঁড়িয়ে থাকে বিক্রি করবে বলে। যারা ভিতরে আসে, প্রার্থনা সেরে, মনস্কামনা পূরণের আশায় বা প্রিয়জনের মঙ্গল কামনা করে আলো জ্বেলে যায় ।
সঞ্চারী ভাবে অনেক লোকজন থাকে নিশ্চয়ই। না হলে এত বড় বিশাল এই জায়গাটা পরিষ্কারই বা রাখা যাবে কী করে? তবে আগে হয়তো আরও লোক থাকত। কত পুরোনো তালামারা দরজা জানালা দেখা যাচ্ছে। আবার গাইড বলেছেন নানান ফেস্টিভালে দেশ-বিদেশের মানুষ উপচে পড়ে। ফিস্টে খাওয়াদাওয়া হয়। প্রচুর লোকবল না থাকলে এসব সামলানো যাবে না।
এমনিতে তো বিশাল উঁচু হল নিঃশব্দ। পরিচ্ছন্ন। একেবারে শুরুতে তাদের গ্রুপটা যখন এসে ঢুকল লম্বা রোব পরা এক প্রৌঢ় এসে বলে গেছেন কোনও জিনিসে হাত না দিতে। সিসি টিভির ক্যামেরাও দেখা গেছে এদিক ওদিক।
সিঁড়ির নিচে আর্চ দেওয়া আছে পরপর। সেই আবছায়া ঢাকা জায়গায় সারি সারি ছোট ছোট কাঠের বন্ধ দরজা। হয়তো আগে এখানে লোক থাকত।
আস্তে আস্তে সেইখান দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ই সঞ্চারীর কানে এসেছিল পুরুষকণ্ঠের মাদকতা মাখানো সেই আর্ত উচ্চারণ।
“আহ! মারিয়া! লিক ইট অফ। লিক ইট অল অফফ…”
চুম্বকের মতো সঞ্চারীকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল সেই স্বর।
ঝিমঝিম নেশা ধরে যাচ্ছিল সঞ্চারীর। আকাঙ্ক্ষার এই সোনালি মুহূর্তের সাক্ষী হবার নিষিদ্ধ উত্তেজনায় হৃদপিণ্ড ছুটছে অশ্বগতিতে। তেতে উঠছে কান, গাল। ঘরের মধ্যে জ্বলতে থাকা মোমবাতিদানের মোমের মতোই কী যেন গলে যাচ্ছে ভিতরে।
চক্ষু-কর্ণ-নাসিকা-জিহ্বা-ত্বক; সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে প্যাশনের সুরা পান করছে দুটি জ্বলন্ত শিখার মতো সত্তা।আগুনের তাপ ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশের হাওয়া বাতাসে। কী যেন পিপাসার ঢেউ উঠছে ইথারের তরঙ্গে।
হঠাৎ তীব্র মধুর এই দৃশ্যটা খানখান হয়ে গেল এক ধারালো ধাতব ঝিলিকে। মূর্তির মতো সুন্দর টানটান পুরুষ পিঠের মাঝবরাবর ছিটকে এসে বিঁধে গেল তীক্ষ্ণ ধাতব কিছু। গড়িয়ে পড়া রক্তের ধারা, সামনে বসা মেয়েটির ভীত আতঙ্কিত মুখের চমকে ওঠা ভয় আর তীক্ষ্ণ তীব্র আর্তনাদের মধ্যেই উলটে গেল ঘরের মোমবাতিদান। ঘর অন্ধকার। তারপর মর্মান্তিক নারীকণ্ঠের আরেকটি চিৎকার তার মৃত্যুযন্ত্রণার জানান দিল বুঝি।
পরের মুহূর্তেই আচমকা শুনশান নিস্তব্ধতার মধ্যে ফিরে এসে চমকে উঠল সঞ্চারী। নিঃশব্দ দুপুর। চার্চের প্যাসেজ চুপচাপ।
ভীষণ হতভম্ব হয়ে চারদিকে তাকাতেই দেখল, আধবুড়ো পাদ্রী হেঁটে আসছেন একপাশের থামের কোনা থেকে। সাদাকালোয় মেশানো একগাল দাড়ি। লম্বা কালো রোব পরনে। গলায় রোজারি বিডসের পুঁতির সঙ্গে ক্রস ঝুলছে।
তিনি বললেন, “দেখতে পেলে বুঝি? ওহ অনেকেই পায়। ছেলেটার পরে মেয়েটাও একইভাবে খুন হয়েছিল। একই সঙ্গে। একেবারে এফোঁড়ওফোঁড়। পরের দিন টের পেয়েছিল সবাই। পাপ কি আর চাপা থাকে? বিয়ে না শাদি না, চার্চের মধ্যে এসে বেলেল্লাপনা। নরকেই জায়গা হওয়া উচিত এইসব ব্যভিচারীদের। তবু তো চার্চের মধ্যে মৃত্যু, তাই কবরে জায়গা দিয়েছিলেন বিশপরা…”
গলার স্বরটা ভালো লাগল না সঞ্চারীর।
বলেন কী পাদ্রী! দুটো মানুষ ভালোবাসছিল বলেই এমন হিংস্র হয়ে উঠছে এঁর গলার আওয়াজ? যিশাস না বলেছেন প্রেমের, ক্ষমার ধর্ম প্রচার করতে?
তবু এ ভদ্রলোকের পাশে পাশেই পা চালিয়ে এই সিঁড়ির তলার অন্ধকারটা থেকে বেরিয়ে যেতে চায় সঞ্চারী। পৌঁছতে চায় বাইরের আলোয় ।
চলতে চলতেই বলে, “ব্যভিচারী বলছেন কেন? ভালোবাসা কি অপরাধ?”
হাত তুলে থামিয়ে দেন ফাদার।
“থামো হে। যা জানো না তাই নিয়ে কথা বলো কেন? বলেছিল সুইসাইড। কিন্তু আসলে তো পুরনো লাইট হাউস থেকে বৌটাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল ছোকরা। ওই যে লোকাল হিরো, পাওলো। একমাথা কোঁকড়া চুল, রোগা মতন সেই মেয়েটা। হ্যাঁ, খুব বদমেজাজি ছিল বটে। পাওলো অন্য কারও দিকে তাকালেও আঁচড়ে কামড়ে চেঁচিয়ে অস্থির করে ফেলত। তা অন্য কারও দিকে তাকানোই বা কেন? ঢের পয়সা দিয়েছিল মেয়েটার বাপ বিয়ের সময়। নইলে অত হাড্ডিসার মেয়ের দিকে ফিরেও তাকাত না হিরো। সে পয়সা দিয়েই তো অতবড় ফার্নিচারের দোকান তৈরি হল। দোকানেও এসে বসে থাকত বউ। পাছে বর অন্য কারোর সাথে ফষ্টিনষ্টি করে। পাগল! পাগল! আরে, অমনি করে আটকানো যায় কাউকে? আর এ ছোকরা তো আজন্ম লক্কা পায়রা। চারপাশে চিরকাল মাছির মতো মেয়েমানুষ ভন ভন। তাকে সামলে রাখা কি আর ওই খ্যাংরাকাঠি পুচকে মেয়ের কম্মো? কেবল ঘ্যানঘ্যান আর চেঁচামিচি। পাড়ার লোক অবধি অস্থির হয়ে থাকত। তিতিবিরক্ত পাওলো লাইটহাউস দেখতে নিয়ে গেল বউকে এক রোববারে। ফিরে এসে বলল বারণ না শুনে পাঁচিলের ধারে উঠে ঝগড়া করছিল বউ। বলছিল পাওলো যথেষ্ট মনোযোগ দেয় না, ভালবাসে না, তাই সুইসাইড করবে। সেইসব কথা কাটাকাটির মধ্যেই হঠাৎ পা স্লিপ করে নিচে পড়ে গেছে। সকলেই জানত মেয়েটা খ্যাপাটে। নিচ থেকে বডি উদ্ধার করে আনল সবাই মিলে। ভারী কান্নাকাটি করে তাকে কবর দিয়ে হাঁফ ছাড়ল ছোকরা।”
চটপট পা চালাচ্ছিল সঞ্চারী। লম্বা লম্বা আর্চের তলার অন্ধকার যেন ফুরোচ্ছেই না, উফফ।
তবু কৌতূহল না চাপতে পেরে মুখ ফেরায়।
“কিন্তু মারল কে?”
কী বিশ্রী খিকখিকে হাসি বুড়ো পাদ্রীর।
“কেন? সিস্টার জোসেফিন? সে তো বরাবর পাওলোর জন্য ফিদা। ভেবেছিল বৌটা মরে যেতেই পাওলো বুঝতে পারবে যে একেবারে মনপ্রাণ দিয়ে তাকে পাবার জন্যই অল্টারে বসে রোজারিতে জপ করে চলেছে জোসেফিন। কিছু যিশাসের জন্য নয়। পাওলো একবার তার দিকে চোখ তুলে তাকালেই চার্চ থেকে এক দৌড়ে পালিয়ে যেত। কিন্তু পাওলো ছুতোর তো কোনোদিন টেরও পায়নি সে ব্যথা। উলটে পাশের জেলেপট্টির মেয়ে মারিয়াকে এই চার্চেই ডেকে এনেছিল, গ্রামের সবার চোখ এড়িয়ে নষ্টামি করার জন্য। তার জন্যেই না খিটখিটে বৌটার গতি করেছিল আগেভাগে। চার্চের ফার্নিচার বানাতে আসত। সেই জন্যেই এই তলার ঘরটা দেওয়া হয়েছিল তো তাকে। সেখানেই শুনশান দুপুরে মারিয়াকে নিয়ে আসত বদমাশটা। মারিয়ার বর মরে গেছিল কবেই। মছছিমার ছিল তো। নৌকো নিয়ে বেরিয়ে ঝড়ে তলিয়ে গেছিল। খুচরো কাজ করে দিন কাটত মেয়েটার। তবে সুন্দরী বলে একটু বেশিই ডাক পেত এদিক ওদিক। নষ্টামির নেশায় ডুবে থেকে এরা টের পায়নি জোসেফিন সব দেখে রাখছে। সে মেয়ে চার্চে জয়েন করেছিল বাচ্চা বয়েসে। সাতটা মেয়ের সাত নম্বর। বাপের কারবার ছিল মদ চোলাই করা। মা-টা বাচ্চা বিয়োতে বিয়োতে অক্কা পেয়ে নিস্তার পেয়েছিল। বাপ রোজ রাতে মদ গিলে ফিরে মেয়েদের একেকটাকে বেল্ট দিয়ে বেদম পিটতে পিটতে ঘরে টেনে নিয়ে গিয়ে দরজা দিত। দশবছুরে জোসেফিনের দিকে যেদিন মাতালের চোখ পড়ল, ও মেয়ে রুটি বানানোর বেলনের ঘায়ে বাপের মাথায় আলু গজিয়ে চার্চে পালিয়ে এল একদৌড়ে। মাদার সুপিরিয়র ছিলেন দয়ার শরীর। চট করে সিস্টার বানিয়ে নেবেন বলে ডিক্লেয়ার করে দিলেন। বুঝেছিলেন, এ না হলে গুণ্ডাটার হাত থেকে রেহাই পাবে না। বছর আট-নয় দিব্যি ভিজে বেড়ালের মতো ছিল ছুকরি। মাথা নিচু করে চলাফেরা করত, যেন কাউকে তাকিয়েও দেখে না। একেবারে সন্তদের মতো হাবভাব। আহা, প্রার্থনার সময় কী চোখ উলটে ভক্তি। যেন সাক্ষাৎ এঞ্জেল। এইসময়েই পাওলোর বিয়ে ঠিক হল। বড়লোক শ্বশুর হবু জামাইকে নিয়ে চার্চে এলেন সিনিয়র বিশপ ফাদারের সঙ্গে সব ব্যবস্থা ঠিক করতে। ব্যস। হয়ে গেল সিস্টারের ধম্মকম্ম। রোজারিতে যিশাসের নামের জায়গায় পাওলোর নাম জপত, নির্ঘাত। বিয়ের দিন মন্দ দেখাচ্ছিল না বউটাকে। সাদা লেসের গাউন, লম্বা ভেইল। পয়সাওলা বাপ সারা চার্চ সাদা লিলি দিয়ে সাজিয়েছিল। মেয়ের মাথায় সাদা গোলাপের টায়রা, হাতের বোকেতে সাদা গোলাপের সঙ্গে সাদা ভেলভেটের লম্বা লম্বা ফিতের বো। মায়ের গয়নাগুলো অত রোগা শরীরে একটু ঢলঢল করছিল বটে। তবু খারাপ লাগছিল না সব মিলিয়ে। পাশে হিরোকে ভালো দেখাচ্ছিল বলাই বাহুল্য। সেই দেখেই সিস্টার ফিদা হয়ে গেছিল আর কী, হে হে।”
এত বুকভাঙা সব কষ্টের কথা এমন রসিয়ে বলছেন ভদ্রলোক, বড্ড রাগ হয়ে গেল সঞ্চারীর। একেবারে রহস্য রোমাঞ্চ গল্প বানিয়ে ফেলছেন বুড়ো। কিন্তু আশ্চর্য কাণ্ড দ্যাখো, কী সহজে বদনাম দিচ্ছেন চার্চেরই কোনও এক মহিলার নামে।
কী রে বাবা!
বাইরের পিলারঘেরা মোমবাতি জ্বালানোর জায়গাটা দেখা যাচ্ছে একটু দূরে। সাহস পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল সঞ্চারী।
ভিতরটা অস্থির লাগছে।
কতদিন আগের এ ঘটনা। তাও এমন পরিষ্কার দেখতে পাওয়া যাচ্ছে! এখনও! কীসে আটকে থাকে ছবিরা? আকাঙ্ক্ষার তীব্রতায়? অপূর্ণ কামনার টানে? শরীরের ক্ষুধায়? শরীরগুলো তো নষ্ট হয়ে গেছে কবেই। তবু এত চাওয়া থেকে যাবে!
আর এই যে খ্যাঁকখ্যাঁকে বুড়ো, ধর্মযাজক বটে, কিন্তু ধার্মিক কি? কী বিশ্রী কথা বলার ভঙ্গি। কতদিন আগে মরে গেছে বলেও মানুষগুলোর প্রতি না আছে সম্মান, না আছে সমবেদনা। জঘন্য!
“থামুন তো। কে মেরেছে সে তো দেখাই গেল না। শুধু শুধু বদনাম করছেন চার্চের কোনও মেম্বারের নামে। প্রমাণ আছে কিছু? এটা নিশ্চয় অনেক-অনেকদিন আগের ঘটনা?”
“ছিল তো প্রমাণ। ছিল বইকি। জোসেফিন নিজের মুখে কনফেশান করেছিল যে। একদিন সকালে তো চার্চের মালি পুজোর ফুল নিয়ে ভিতরে ঢুকতে গিয়ে দেখতে পেয়েছিল নিচের তলার ওই ঘরের দরজা খোলা। উঁকি মেরেই চিৎকার করতে করতে এসে অজ্ঞান হয়ে গেল। পরে সবাই ঘরে ঢুকে দেখল পাওলো আর মারিয়া দুজনেই মরে পড়ে আছে। পাওলোর গায়ে সুতোটি নেই। মারিয়া একখানা পাতলা উড়নি জড়ানো। দুজনেই রক্তের পুকুরে চুবে আছে। খুব ধারালো কোনও অস্ত্র দিয়ে গিঁথে দিয়েছে দুজনকেই কেউ। ইনকোয়েস্টের পর; করোনার খুব আশ্চর্য হয়ে বলেছিলেন, প্রত্যেকটি আঘাত এত সরু অথচ গভীর, এমন ধরনের অভিজ্ঞতা তাঁর আর কখনও হয়নি। দেশে বা বিদেশে, এত সরু ছুরি তিনি কখনও দেখেননি। অস্ত্রটাও পাওয়া যায়নি অবশ্য। খালি এক বাটি মধু চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। আইনি ঝঞ্ঝাট মিটে যেতে কবর দেওয়া হল দুটোকেই। সিনিয়ররা বললেন, চার্চের মধ্যে মারা গেছে, আর দুজনেই সিঙ্গল, কাজেই এদের মাফ করে দেওয়া যায়। সেদিন সন্ধেবেলা জোসেফিন কনফেশান বক্সে এল। বলল, রোজই দরজার ফাঁক দিয়ে ওদের দেখত। এই আজ যেমন তুমি দেখছিলে। ওদিন আর সহ্য করতে পারেনি। আগের দিনই মারিয়া চাকভাঙা মধু আনবে বলে গেছিল ছোকরাকে মিচকি হেসে। মধু দিয়ে কী হবে জানতে, ওদের আসার আগেই সিস্টার ঘরের একপাশে দাঁড় করানো ভাঙা কাঠের আলমারির ভিতরে ঢুকে বসেছিল। আদরের বহর দেখে রাগে অন্ধ হয়ে আগে পাওলোকে মেরেছে, পরে অন্ধকারে মারিয়াকে। কিছুতেই আর সহ্য হয়নি ওর। কিন্তু এখন নাকি পাওলোর জন্য খুউব কষ্ট হচ্ছে। আমি ওই কনফেশানবক্সে দাঁড়িয়েই তক্ষুনি বলে দিয়েছিলাম, ঘাড় ধরে চার্চ থেকে বের করে দেব। অনেকদিন তক্কে তক্কে থেকেছি। পাওলোর বিয়ের দিন থেকেই দেখেছি, ওর নজর একেবারে আঠার মতো চিপকে আছে ছোকরার গায়ে। মাদার সুপিরিয়র যতই দয়াপরবশ হয়ে চার্চে নিয়ে নিন; কী ফ্যামিলির মাল সে তো দেখতে হবে। এদের ভিতর ধম্ম ঢোকানো হোলি মাদারেরও কম্মো নয়, হ্যাঃ! আর তখনই তো…”
তীব্র তীক্ষ্ণ কন্ঠ ক্রমশ উপরে উঠতে থাকে।
“…তখনই তো ওই ধারালো স্কুয়ারিং-এর তারটা দিয়ে কনফেশান বক্সের মধ্যেই আমাকেও এফোঁড় ওফোঁড় করে বেরিয়ে চলে গেল, দ্যাট কোল্ড ব্লাডেড মার্ডারার। অলটারের গলানো মোম, ধুপের ছাই পরিস্কার করতে ব্যবহার হয় ওই তার। শক্ত তামার তৈরি। ওইটেকেই ধার দিয়ে মারাত্মক করে তুলেছিল শয়তানী, কেউ টের পেল না। অথচ তারপর কত কত বছর চার্চের সবাই জানল ও ভারী ভক্তিমতী সন্ন্যাসিনী। চোখ নামিয়ে কেবল পুজোর কাজই করে চলে। কী সংযম, কী ভক্তি। কেউ টের পেল না। ইস, কেউ না, কেউ না। আ ব্লাসফেমি ইউ নো? আ শিয়ার ব্লাসফেমি…”
নিষ্ফল আক্রোশে উচ্চারিত শব্দের মধ্যেই একটু একটু করে মুছে যাচ্ছিলেন ক্ষমাহীন ফাদার। ক্রমশ আবছা হয়ে আসছিল তাঁর অবয়ব। ইরেজারে মোছা পেন্সিল স্কেচের মতো মুছে যাচ্ছিল হাত-পা, রোব, কাঁচাপাকা চুল-দাড়ি।
ঘণ্টার আওয়াজ আসছিল চার্চের ভিতর থেকে। সেখানে সোনায় মোড়া অল্টারের ওপরে নির্মম পেরেকবিদ্ধ যিশুর হৃদপিণ্ড থেকে কেবলই গড়িয়ে পড়ে কাঁটার মুকুটে গিঁথে থাকা যন্ত্রণা। ভালোবাসার পাপ। অনুশোচনার গলতে থাকা মোম ।
ক্রশের সাইন আঁকতে আঁকতে দৌড়ে বাইরের রোদে এসে দাঁড়িয়ে দরদর করে ঘামতে থাকল সঞ্চারী।
“ওহ যিশাস!”