আজ একটু বেশিই ভিড়। ভিড় হওয়াটাই অবশ্য স্বাভাবিক। আজ মেলার শেষ দিন। সার্কাস, মওত কা কুয়া, চিত্রহার, নাগরদোলাসহ মেলার সমস্ত স্টলগুলো চুটিয়ে ব্যবসা করছে। এই ব্যবসা চলবে রাত দুটো-আড়াইটা অবধি। ঘড়িতে এখন সাড়ে এগারো। চারিদিকের মাইকিং ও লোকজনের আওয়াজে মাথার ভেতরটা ভোঁ ভোঁ করছে। একটা চরম অস্বস্তি নেমে আসছে মাথা থেকে পা। এই অস্বস্তিটা তিনদিন আগে থেকে শুরু হয়েছে। শরীরের ঠিক কোন জায়গাতে যে অসুবিধা, বোঝা যাচ্ছে না। তার জন্য পারফরম্যান্সেও গন্ডগোল হচ্ছে। কাল রাতে বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচার পর আজ আবার একই ভুল। তাই শো শেষের আগেই ইয়ামাহা আর এক্স হান্ড্রেড বাইকটা নিয়ে নিচে নেমে আসে বিকাশ। অমিত, ফিরোজরা তখনও উপরে। সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্স আর ঘর্ষণকে ব্যবহার করে ফুল স্পিডে ঘুরছে কুয়োর ভেতর। শো শেষ না হতেই কাঠের কব্জা টেনে বাইরে বেরিয়ে এল সে।
কিছুক্ষণ ধরে একটা সরু লিকলিকে নালার পাশে উবু হয়ে বসে আছে বিকাশ। এখনও আরও দুটো শো বাকি। তাকে না পেয়ে অমিতরা নিশ্চয়ই এতক্ষণে খিস্তিখেউড়ের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। খোঁজাখুঁজিও করছে বোধ হয়। যা-ই হয়ে যাক বিকাশ কোনোভাবেই আজ আর শো তে নামবে না। মাথাটা পুরো ঘেঁটে আছে। দু-তিনবার গলায় আঙুল দিয়ে বমির চেষ্টা করাতেও লাভ হয়নি। ‘ওয়াক’ আর লালা ছাড়া কিছুই বের হয়নি। বের হওয়ার কথাও নয়। বমি হতে গেলে পেটে কিছু থাকা দরকার। সকাল থেকে জল ছাড়া ভেতরে আর কিছু ঢোকেনি। বিকাশ ইচ্ছাকৃতভাবেই ঢোকায়নি।
মেলার মাঠের পেছনে রাস্তার দু-ধার দিয়ে পরপর অনেকগুলো হোটেল। বাইরে লেখা ‘মহাদেবের হোটেল— ডাল ভাত ৩০, মাছ ভাত ৫০’। ভেতরে ভাত কম, মাল বেচে বেশি। নিকৃষ্ট মানের মদ। এখানে সব চলে। মাল পেলেই তাল হারায় পাবলিক। এই ‘হোটেল’গুলো সারা বছর গান্ধিজির মুখ দর্শন পায় না বললেই চলে। মেলার দিনগুলোতেই রমরমিয়ে ব্যবসা। লেবার ও স্টলের লোকজন রাতে তাঁবু খাটিয়ে ঘুমোয়, আর সকালে এসে চায়ের বদলে মাল খেয়ে যায়।
দুপুরে অমিত, ফিরোজ, নায়ার আর বিকাশ এসেছিল এখানে। এরা সবাই মওত কা কুয়ায় গাড়ি চালিয়ে খেলা দেখায়। অমিত, ফিরোজ, বিকাশ বাইক আর নায়ার মারুতি এইট হান্ড্রেড। কাঠের কব্জা দিয়ে ঘেরা ষাট ফুট গভীর চোঙাকৃতি কুয়োর গায়ে বীভৎস গতিতে গাড়ি চালিয়ে চোখ ধাঁধানো সব খেলা। কখনও দু-পায়ের ফাঁকে বাইক রেখে হাত ছেড়ে দাঁড়িয়ে গোল করে ঘুরছে, তো কখনও কাত হয়ে থাকা মারুতির জানালার বাইরে বেরিয়ে আসছে ড্রাইভারের দেহের অর্ধেক অংশ, কখনও বা তিনটে বাইক ও একটা মারুতির ড্রাইভার ঘুরন্ত অবস্থাতেই একে অপরের হাত ধরাধরি করে স্টান্ট দেখাচ্ছে।
কুয়োর উপরের দিকে গোল করে রেলিং ঘেরা দুটো সারি আছে— একটার ওপর আরেকটা। পাবলিক সেই সারিগুলোতে দাঁড়িয়েই মজা নেয় জীবন-মৃত্যুর এই অসাধারণ খেলার।
খেলার সময় তাদের কনসেনট্রেশন ব্রেক করার উপায়ও পাবলিকের জানা আছে। রেলিং থেকে হাত বাড়িয়ে দশ-বিশ টাকার নোট দেখায় উন্মত্ত জনতা। আর বিকাশরা ফুল ফোর্সে ঘুরতে ঘুরতেই টাকাগুলো ছোঁ মেরে নেয়। আবার কিছু খচ্চর লোক হাত বাড়িয়ে টাকা দেখায় ঠিকই, কিন্তু ছোঁ মারার আগ মুহূর্তে নোট ধরা হাতটা ঝড়ের গতিতে পেছনের দিকে সরিয়ে আনে। এতে ডিস্ট্রাকশন আরও বেশি। এভাবে টাকা নিতে গিয়ে বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনার খপ্পরেও পড়তে হয়েছে। আর দর্শকরা সেখানেই খুঁজে পেয়েছে বিনোদনের মুখ্য খোরাক। তবে তিনদিন ধরে বিকাশের কনসেন্ট্রেশন অন্য কারণে ভেঙে যাচ্ছে।
দুপুরে খেতে এসে অনেকক্ষণ ধরে ডালমাখা মোটা চালের ভাতগুলো একমনে টিপে যাচ্ছিল বিকাশ। তাকে অন্যমনস্ক দেখে নায়ার কারণ জানতে চেয়ে বলল, “তেরেকো কুছ হুয়া হ্যায় কিয়া?”
কী বলবে ভেবে না পেয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে ‘না’ বলল বিকাশ। নায়ার আর কথা বাড়াল না। কিন্তু পাশ থেকে অমিতের ঝাঁঝালো গলা— “তোর ইরাদাটা কী বে? শো কেন খারাপ করছিস?”
অমিতের দিকে মুখ তুলে তাকাল বিকাশ। একুশ-বাইশের টিঙটিঙে চুনোপুঁটি, তার আবার এত্ত গরম! কয়েকটা কাঁচা খিস্তি মুখ থেকে লাফিয়ে বের হতে যাবে, তখনই অমিত বলল, “সন্তোষ বলেছে আজ গড়বড় হলে এখান থেকে ফুটে যেতে। লাইনে অনেক ছেলে আছে।”
শেষ কথাটায় মাথাটা চড়াৎ করে গরম হয়ে গেল বিকাশের। ইচ্ছে করছিল এঁটো হাতে তখনই উঠে গিয়ে সন্তোষের গালে কষিয়ে এক চড় মারতে। মালিক না হলে অনেকদিন আগেই মেরে দিত। বিকাশ এই লাইনে আছে বারো বছর। বহু মেলায় ঘুরে ঘুরে শো দেখিয়েছে। বহু মালিকের দাপট দেখেছে। কিন্তু এই সন্তোষ মালটা অ্যান্টিক পিস।
বিকাশ আগে যখন শো করতে যেত, সঙ্গে থাকত সামিনা— বিকাশের বউ। ফর্সা পাতলা চেহারার সেই বউকে সঙ্গে নিয়ে মেলায় মেলায় ঘোরাটা যে মোটেও নিরাপদ নয়, তা ভালো করেই জানত বিকাশ। কিন্তু বউ বলত, “তুই গাড়ি চালাবি, আমি মুড়ি-টুড়ি বেচব। কিছু তো কামাই হবে।” সেবার সারা মেলায় ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করছিল সামিনা। পয়সাও আসছিল ভালোই। কিন্তু মুড়ির সঙ্গে অন্য কিছুও বিক্রি চলছিল…
বিকাশ জানতে পেরেছিল দিন কয়েক পর। ফিরোজই খবরটা দিয়েছিল। গভীর রাতে নদীর পাশে ঝোপে হালকা হয়ে ফিরে আসছিল ফিরোজ। হঠাৎ চোখ যায় সন্তোষের ত্রিপাল খাটানো তাঁবুর ভেতর। অন্ধকারে সামিনার মুখটা অপষ্ট দেখা গেলেও দুদিন পর তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে ফিরোজ।
খবরটা শুনে বিকাশ ভেবেছিল সন্তোষকে খুনই করে ফেলবে। কিন্তু তারপরই কানে ভেসে এসেছিল আরও একটা খবর।
“এই বেটি নাকি বেশ্যা।” কথাটা বলে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছিল অমিত।
সন্তোষকে আর চড় মারা হয়নি। লাথিঝাঁটা মেরে জীবন থেকে বিদায় করেছিল সামিনাকে। শালিটার নাম মাথায় আসলেই গা ঘিনঘিন করে।
ডানদিকের নালাটা তাক করে এক খাবলা থুতু ছেটাল বিকাশ। থুতুটা শুকনো নালাটার গায়ে লেপটে গেল।
এখানে আলো খুব একটা আসছে না। এটা মাঠের একেবারে কোনার দিক। বাঁদিকে ঝোপঝাড় ভর্তি। সামনে কয়েকটা গাছ মাথা এলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর সেই গাছগুলোর ফাঁকফোকর দিয়েই দেখা যাচ্ছে সার্কাসের ভিড়। অন্যান্য দিন রাতে দুটোর বেশি শো হয় না, লোক আসে না। আজ মাঠটা গিজগিজ করছে। পাঁচ নম্বর শো চলছে। ছ-নম্বরও হতে পারে। অত খেয়াল থাকে নাকি। তাছাড়া ওই সার্কাসের শোয়ের খবর রেখেই বা কী লাভ? তারা কি বিকাশকে টাকা দেবে? নাকি এক গ্লাস মদ এনে বলবে, “নে ভাই, এটা তোর খাটনির ইনাম…”
জন্তুজানোয়ার নিয়ে নাচানাচি ছাড়া আর পারেই বা কী ওরা? আর ওই লিলিপুট জোকারগুলো তো আরও বেয়াদপ। শুয়ে, গড়িয়ে, লাফালাফি করে মানুষের পেটে সুড়সুড়ি দিয়ে হাসানোর চেষ্টা করে। দম থাকলে জীবন নিয়ে খেলুক। মওত কা কুয়ায় এসে বাইক-গাড়ি চালাক। গাড়ি চালাবে? গিয়ারে পা-ই পৌঁছবে না শাল্লাহ।
বিকাশের ডানদিকে কাপড় দিয়ে উঁচু করে ঘেরা দেওয়া। ঘেরার ওই পারেই চিত্রহার। ওপাশ থেকে ভেসে আসছে ঝিংচ্যাক গান আর মাইকিং-এর আওয়াজ। “আইয়ে আইয়ে ভাই অওর বেহেনো, দেখকে যাইয়ে…” বিকাশ পেছনে তাকাল। বিশাল লাইন। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকের চোখের খিদেও বেড়েছে মনে হয়। মেলার শেষদিনে প্রতিটা ব্যাটাছেলে নিজের চোখ সেঁকেই বাড়ি যেতে চায়। গানের তালে আন্দোলিত মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ লাইভ দেখার মজাই আলাদা। বিকাশের হঠাৎ মনে পড়ল ওই মেয়েটার কথা। বুকে ঠাসা নীল রঙের একটা টাইট ব্লাউজ আর হাঁটুর অনেকটা উপরে শেষ হওয়া স্কার্ট পরে নাচছিল। কী যেন নাম… রূপালি। অমিতের কাছ থেকেই নামটা জেনেছিল। রূপালিও তাহলে নাচছে এখন। ফর্সা পেট, নাভি, পাগুলো দেখে সবাই নিশ্চয়ই চোখ সেঁকে নিচ্ছে। যেমনটা বিকাশ, ফিরোজরা নিয়েছিল।
মেলার প্রথম দিন শুধু দুটো শো করিয়েছিল সন্তোষ। লোকজন আসছে না দেখে কাউন্টার বন্ধ করে পাশের চিত্রহারে মস্তি করতে ঢুকেছিল। দুটো শোয়ে কামানো টাকা দিয়ে বিকাশরাও গিয়েছিল একটু ফূর্তি করতে। ঢুকেই ওদের চোখে আগুন। স্টেজের উপর হিন্দি আইটেম গানের তালে পাঁচ-ছ-টা মেয়ে নেচে যাচ্ছে উদ্দাম। বিটের সাথে সাথে কেঁপে উঠছে তাদের ব্লাউজ ঠাসা বুক। কেউ কেউ আবার সামনে ঝুঁকে খাঁজ দেখাচ্ছে। যত ঝুঁকছে তত সিটি, হাততালি। সব ক-টা মেয়ের মধ্যে যার স্কার্টটা সবচেয়ে ছোট, পাবলিক তার দিকেই বাড়িয়ে দিচ্ছে নোট। মেয়েটা ঝুঁকে টাকাটা বুকের মাঝে গুঁজে নিয়ে আবার নাচ শুরু। ছোট্ট স্কার্টটাকে একটু উপর-নিচ করতেই আরও সিটি… টাকা। এতদিন ধরে মেলায় মেলায় ঘুরলেও এরকম দুর্ধর্ষ চিত্রহার নজরে পড়েনি তেত্রিশ বছর বয়সি বিকাশের। খালি মনে হচ্ছিল ওই ছোট্ট স্কার্ট পরা ফর্সা মেয়েটাকে যদি একটু ছোঁয়া যেত।
বিকাশের ছোঁয়া হয়নি। কিন্তু এর মধ্যেই অমিতের ছোঁয়াছানি সব শেষ। সেদিন নাচ দেখতে গিয়ে অমিত মেয়েটার চোখে কী যেন দেখেছিল। তারপর শো শেষে নাম জানাজানি, দুদিন একসঙ্গে এক হোটেলে খাওয়া, হাত ধরাধরি… প্রেম। মেলার শেষে তারা নাকি বিয়েও করবে অমিত জানিয়েছে। অমিত মওত কা কুয়ায়, রূপালি চিত্রহারে শো করবে। পয়সা ভালোই আসবে। মাখন সংসার… শাল্লাহ! মালটার ভাগ্য… মাথাটা আবার চড়াৎ করে গরম হয়ে গেল বিকাশের।
আরও কিছুক্ষণ এলোমেলো ভাবার পর আচমকাই সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলল বিকাশ। কাল সকালেই সন্তোষের কাছ থেকে পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে পক্সের স্পট বসানো রোগা কালো দেহটা নিয়ে বেরিয়ে পড়বে অন্য কোনও কাজের খোঁজে। “আমি আর কাজ করছি না” কথাটার উত্তরে সন্তোষ কী বলবে? কুকুর-বেড়ালকে বেশিদিন পুষলে মায়া পড়ে যায়, ছাড়তে ইচ্ছে করে না। ওর কি মায়া পড়েছে? যদি বলে “গিয়ে কী করবি, থেকে যা। পরের মেলায় আসল খেলা দেখিয়ে দিস…” তারপরেও কি মুখের ওপর ‘না’ বলে বেরিয়ে আসতে পারবে? শেষের কথাটা যদিও ফালতু স্বপ্ন। এসব জানোয়ার লোকের আবার মায়াদয়া হয় নাকি! তাছাড়া সন্তোষ নিজেই বলেছে খেলায় গন্ডগোল হলে ফুটে যেতে। তাই ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করার আগে নিজে থেকেই বেরিয়ে আসবে বিকাশ। আর কোনোদিনও ঢুকবে না মৃত্যু লেখা কুয়োর ভেতর।
এ সমস্ত ভাবতে ভাবতে উঠে দাঁড়াল বিকাশ। ডানহাত দিয়ে ফুলশার্টের হাতাটা খানিকটা উঠিয়ে সস্তা রিস্ট ওয়াচের কাচের ওপর চোখ বোলাল। টাইম অনুযায়ী চললে এখন আর একটা শো বাকি। লাস্ট শো।
অস্বস্তিটা আজকে আর কমবে বলে মনে হয় না। বিকাশ তাঁবুর দিকে পা বাড়াল। তাঁবুটা মওত কা কুয়ার পাশেই। এক চিলতে ছোট্ট জায়গায় চারজনের মাথা ঢোকানোর ব্যবস্থা। এখন গিয়ে টেনে এক ঘুম লাগাবে। তারপর কাল সকাল সকাল…
দুই
কোনোরকম ভুল হচ্ছে না। নব্বই ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে দুর্দান্ত গতিতে ঘুরে যাচ্ছে ইয়ামাহা আর এক্স হান্ড্রেড। জীবনের সেরা পারফরম্যান্স দিয়ে দর্শকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে তা টের পাচ্ছে বিকাশ। কাঠের কব্জাগুলোর ওপর দিয়ে বাইকের চাকা নিয়ে যেতে যেতে বিকাশ খেয়াল করল ফার্স্ট আর সেকেন্ড দুটো রোতেই উপচে পড়া ভিড়। কানে ভেসে আসছে উত্তেজিত দর্শকদের সিটি, হাততালি, কলরব। আজ আর ছোঁ মেরে টাকা নিতে হচ্ছে না। পাবলিক খুশি হয়েই উড়িয়ে দিচ্ছে দশ-বিশ-পঞ্চাশের নোট। নোটগুলো উড়তে উড়তে কুয়োর নিচে এসে পড়ছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। নতুন একটা স্টান্ট দেখাবে এই ভেবেই কুয়োর গায়ে বাইক উঠিয়েছিল। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়েই স্টান্টটা করবে। ঘুরন্ত অবস্থাতেই বাইকের ওপর শুয়ে পড়বে। যেভাবে সামিনার ওপর সন্তোষ… বিকাশ এক্সেলারেটরে চাপ বাড়াল।
খাঁ খাঁ ফাঁকা দর্শকাসনের ফার্স্ট রো-তে দাঁড়িয়ে অমিত আর নায়ার অবাক হয়ে দেখে যাচ্ছে বিস্ময়কর স্টান্ট। গভীর রাতে বাইকের জোরালো আওয়াজ শুনেই ওরা বেরিয়ে এসেছিল তাঁবুর ভেতর থেকে। ঘুমন্ত মেলার বুকে মৃত্যুকূপের দেওয়ালে তেত্রিশ বছরের একটা জ্যান্ত মানুষ বৃত্তাকারে ঘুরে যাচ্ছে যন্ত্রের মতো অবিরাম। দেখামাত্রই সন্তোষকে ডাকতে বেরিয়ে গেছে ফিরোজ।
বাইকের এরকম অবিশ্বাস্য কায়দার খেলা দেখে পাথরের মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিল অমিত। ফার্স্ট রো-এর রেলিংটা শক্ত করে চেপে কুয়োর ভেতর বিকাশের চোখে চোখ পড়তেই বুক মুচড়ে উঠল তার। আচমকা মনে হল সন্তোষ এখনও এল না কেন? রূপালি কি এখন নিজের তাঁবুতেই ঘুমোচ্ছে?
প্রথম প্রকাশ – ১৮ মার্চ, ২০১৮ উত্তরবঙ্গ সংবাদ
জীবনের সমীকরণ রাস্তা মেপে চলে না। কিন্তু আমরা সকলেই সে রাস্তাটার খোঁজে জীবনপাত করে দিই।
এদের জীবন নিয়ে গল্প, এই প্রথম পড়লাম। ভালো লাগল খুব।