বাসস্টপের সঙ্গে সম্পর্ক সেই ছোট্ট থেকে। তখনকার দিনে মধ্যবিত্ত মানে তাদের সীমিত বিত্তই সম্বল ছিল। পাড়ায় পাড়ায় মুদি দোকানের মতো ব্যাঙ্কও ছিল না, আর ঠিক দুক্কুরবেলা মুঠোফোনে ঠেলা দিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে, “ধার নেবে গো, ধার নেবে গো” বলে সাধাসাধিও ছিল না। তাই মধ্যবিত্তের নিজস্ব গাড়ি ছিল না। এমনকী বাপ-ঠাকুরদায় না রেখে গেলে, রিটায়ারমেন্টের আগে নিজের বাড়িও ছিল না। সে ছিল মাস মাইনেয় ভরসা রাখার যুগ। যেহেতু গাড়ি ছিল না, তাই বাসস্টপের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নিবিড়। ইস্কুল যাওয়া, বেড়াতে যাওয়া, পুজোয় ঠাকুর দেখতে যাওয়া, সদর বাজারে হালখাতা করতে যাওয়া, দূরে সার্কাস দেখতে যাওয়া, রাবণপোড়া দেখতে যাওয়া, রথের মেলায় যাওয়া, কলেজ যাওয়া, আপিস যাওয়া, মামাবাড়ি যাওয়া, দেশের বাড়ি যাওয়া, পাশের গাঁয়ে যাত্রা দেখতে যাওয়া, ট্রেন ধরতে ইস্টিশনে যাওয়া, সবেধন নীলমণি একখানা হেলথ সেন্টার আর একখানা সদর হাসপাতালে যাওয়া, যে কোনও জায়গায় যেতে গেলেই বাস ধরতে ওই বাসস্টপ ভরসা।
ঘুনসির তাই ছেলেবেলা থেকেই বাসস্টপ বড় প্রিয়। দেশের বাড়িতেই থাকা হয়েছে সারাজীবন। লোকাল ট্রেনের নিত্যযাত্রী হয়ে সরকারি আপিসে কলম পিষে মাসমাইনে। ঘুনসির ভালো নামে আমাদের কাজ নেই। সে নাম ইস্কুল কলেজের খাতায়, কিছু সংশাপত্রে, আপিসের খাতায়, সহকর্মীদের কাছে, পার্টির খাতায়, রেশন কার্ডে, বাপ-ঠাকুরদার রেখে যাওয়া জমি বাড়ির দলিলেই থাক৷ আমাদের গেঁয়ো ঘুনসিকে নিয়েই মাথাব্যথা। ছেলেবেলায় ঠাকমা কোমরে পরিয়ে দিয়েছিল ঘুনসি। তারপর সেই নাদাপেটা বালক আদুল গায়ে কোমরে ঘুনসি জড়িয়ে বালি-কাদা-জলে খেলেধুলে বড় হয়ে গেল একসময়। নাম কেন ঘুনসি তা জানা নেই। যেখানকার বাসস্টপের কথা হচ্ছে, তা নামেই মফস্বল, আদপে সে এক গঞ্জ। ঘুনসির জন্মভিটে সেই গঞ্জেরই এক বাঁশবাগানের ধারে। ঘন বিস্তৃত বাঁশবাগান। না, ফর্মুলা মেনে কোনও ভূতের আড্ডা নেই সেখানে। অন্তত গঞ্জের কেউ কখনও দেখেনি। গোছা গোছা বাঁশঝাড়ের ফাঁকে সূর্যের আলো গলে গলে সোজা ঢুকে পড়ে ঘুনসিদের বাড়ির উঠোনে। প্রেমিকের ছবির ওপর প্রেমিকার ভালোবাসার ছোঁয়ার মতো সে রোদ ধানের গোলার চারিধারে হাত বোলায়। পুঁইমাচা, চালকুমড়োর সঙ্গে খুনসুটি করে শেষ বিকেলে বাসস্টপের গায়ে হেলান দিয়ে খানিক জিরোয়। তারপর সেদিনের মতো গঞ্জ ছেড়ে পাড়ি দেয়, আবার পরদিন ভোরে ফেরার জন্য।
ঘুনসির ভিটে থেকে বাসস্টপ কয়েক গজের দূরত্বে। আর তার পাশ দিয়েই পাকা বাসরাস্তা। বাসস্টপের একপাশে একটা প্রকাণ্ড অশথ্ব গাছ, অন্য পাশে পান, সিগ্রেট, বিড়ি, চানাচুর, লেড়ো বিস্কুট ইত্যাদির দোকান বা গুমটি বলাই ভালো। আর তার পেছনেই একটা মাঝারি মাপের পানা পুকুর। তবে মজা নয়। খানিকটা তখনও বেশ টলটলে। পানার মাঝে মাঝে দু-একটা শাপলা শালুক ফুটে পুষ্করিণীর মান রেখেছে। বাসস্টপে কত যাত্রী দিনভর আসে, যায়। ছোট জায়গা, অল্প লোকের বাস, সবাই প্রায় সবাইকে চেনে। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই প্রথম বাস যায় শহরের দিকে। শেষ ফিরতির বাস প্রায় রাত এগারোটা পেরিয়ে আসে। যাত্রী নামিয়ে পাকা রাস্তা ধরে মিলিয়ে যায় অন্ধকারে। অত রাতেও পাশের গুমটি খোলা থাকে। কেউ কেউ দু-পাঁচ মিনিট সেখানে দাঁড়িয়ে, একটু সুখটান দিয়ে, এর-ওর সঙ্গে বা দোকানির সঙ্গে দু-চারখানা কথা কয়ে বাড়ির দিকে পা চালায়। এ গঞ্জে ছিঁচকে চোর থাকলেও, ডাকাত বা ভূতপ্রেতের উপদ্রব নেই। ঠ্যাঙাড়েরাও ততদিনে বিলুপ্ত। তাই সম্বৎসর রাতবিরেতে পায়ে হেঁটে ঘুনসিদের বাড়ির পাশ দিয়ে, বাঁশবাগান পেরিয়ে লোকজন বাড়ি ফেরে। ঘুনসির রাতে ঘুম না হওয়ার ব্যারাম। ও সারারাত জেগে থাকে। বাড়ির পাশ দিয়ে লোকজন কে গেল, কে এল দেখে। শুক্লপক্ষে চাঁদ দেখে৷ জোছনায় ভিজে যাওয়া ফুল দেখে৷ রাতপাখিদের শিকার করা দেখে। তাদের ঠোঁটের ডগায় ঝুলে থাকা মরা ইঁদুর বা সাপ দেখে। জ্যান্ত সাপের শঙ্খ লাগা দেখে। নিভারানির জন্য মনটা হু হু করে। সেই কবে তার বিয়ে হয়ে, সে চলে গেল শহরে। গরিব বামুনের সুন্দরী মেয়ে। রূপ আর জাতের জোরে কোনও এক শহুরে বর্ধিষ্ণু বামুন ঘরেই বিয়ে হল। নিভারানির বিয়ের দিন গাঁয়ে ছিল না ঘুনসি। কার সঙ্গে বিয়ে হল খোঁজও করেনি তখন। ছোট জাত ঘুনসির বরাতে জুটল না নিভারানি। কিন্ত আবার সেই জাত বরাতেই ঘুনসির জুটে গেল সরকারি চাকরি।
সকাল সকাল দুটি ভাত খেয়ে বাসে করে ইস্টিশন, তারপর লোকাল ট্রেনে শহরে গিয়ে চাকরি। একই পন্থায় সন্ধ্যা করে বাড়ি ফেরা। চাকরির প্রথম দিনেই একপাল লোক এক খাতায় নাম লেখাতে বলেছিল। তাদের হাতে টুকটুকে রঙিন ঝান্ডা। ঘুনসি খুশি মনে তার ভালো নাম লিখল সে খাতায়। ওদের পঞ্চায়েতও এই দলের। ঘুনসির সেখানেও নাম লেখানো আছে। পার্টির কর্মী সে। মিটিং মিছিলে যায়। ভোটের আগে পোস্টারে আঠা লাগায়, দেওয়াল লেখে। বানান ভুল হয়, তবু লেখে। ভুল ধরার লোক বিশেষ নেই। সে বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে আগেই বাসস্টপটা প্রাণ পেল। তার আগে কেউ একখানা বিস্কুটের টিন পিটিয়ে সোজা করে তার ওপর সাদা রঙ দিয়ে লিখেছিল, ‘এখানে বাস থামিবে’। একখানা লম্বা বাঁশ পুঁতে, তার আগায় টাঙানো ছিল এই সাইনবোর্ড বহুদিন। তারপর মধ্যবিত্তের বোনাস, ওভারটাইম বা ছুটি বিক্রির টাকা পাওয়ার মতোই এক ঝলক খুশির হাওয়া নিয়ে এল এই চকচকে বাসস্টপ। ইঁট বালি সিমেন্টের পাকা বাসস্টপ। একদিকে দেওয়াল তোলা, তিনদিক খোলা, আবার ক-খানা লোহার বেঞ্চিও আছে।
এই বাসস্টপই এখন ঘর হয়েছে আন্নি বুড়ির। বর্ধিষ্ণু বাড়ির সুন্দরী সুগৃহিণী নিভারানি বাসস্টপের এককোণে গুছিয়ে পাতল ‘আন্নি বুড়ি’র সংসার। সংসারের জিনিস বলতে কয়েকটি ছেঁড়া কাঁথাকানি, তোবড়ানো ডালডার টিন, একখানা ঢাউস বস্তা। সে যেন এক গুপ্তধনের পেটি। সবার থেকে আড়াল করে বাসস্টপের দেওয়ালের দিকে মুখ করে সেই বস্তার ভেতর থেকে নানা মহার্ঘ বস্তু সারাদিন ধরে বের করে আর আবার গুছিয়ে তার ভেতর রাখে আন্নি বুড়ি। ঘুনসি যতটা পারে নজরে নজরে রাখে, কিন্তু নিভারানি ওকে চিনতে পারে না। ঘুনসি প্রায় পড়ে থাকে বাসস্টপে, নিভারানিকে পাহারা দিতে। গাঁয়ের লোকের চোখের আড়ালে। মাসখানেক আগেই গ্রামের দুই বখাটে ছেলে বিরক্ত করছিল আন্নি বুড়িকে। আসলে সে তো নামেই বুড়ি। মদ্যপ দুটো বাইক নিয়ে রাতবিরেতে এসেছিল বাসস্টপে। অবশ্য নেশার ঘোরে পাশের পুকুরে গিয়ে পড়ে, আর ওঠেনি। নিভারানির ইজ্জত বেঁচে গিয়েছিল সেদিন। ঠিক কোনদিন থেকে নিভারানি ‘আন্নি বুড়ি’ হল কেউ জানে না। একদিন একমাথা জট, উকুন নিয়ে, ছেঁড়া কাঁপড়ে গা জড়িয়ে কোনও এক ফিরতি বাসের মাথায় চেপে চলে এল। নামল বাসস্টপে। গাঁয়ে ঘুরে ঘুরে কী যেন খুঁজল। তারপর অনেক রাতে ফিরে এল বাসস্টপে। ততক্ষণে গুমটি বন্ধ হয়ে গেছে, শেষ বাস চলে গেছে, শুনশান চারিদিক। সে রাতে সেই বাসস্টপে দুটো নেড়ি কুকুর আর নিভারানি শুয়ে রইল। ভোর হল, একে একে লোক চলাচল শুরু হল। নিভারানিকে ক্রমে চিনতে পারলো অনেকেই। তাকে নানা জনে নানা কথা জিজ্ঞাসা করে। সে কোনও উত্তর দেয় না। শুধু মাঝে মাঝে বলে, “আন্নি, আন্নি।” সেই থেকেই গাঁয়ের ছোট ছেলেপিলের দল ডাকে ‘আন্নি বুড়ি’। এ গাঁয়ে তার বাপের ঘরের আর কেউ নেই। ছোট ভাই জামাইবাবুর দাক্ষিণ্যে বিদেশে কাজ জুটিয়ে নিয়ে চিরতরে গাঁ ছেড়েছে বহুকাল। বাপ-মাও মারা গেছে বেশ কিছুকাল। বাপের ঘরখানা এখন পঞ্চায়েত আপিস। এককালে খুচরো রাজনীতি করা শহুরে বর্ধিষ্ণু পরিবারের বামুন বর, বউ নীভারানির পয়ে পরবর্তীকালে হল মস্ত ব্যবসায়ী, মস্ত রাজনৈতিক নেতা। গঞ্জে গঞ্জে তার সুদের ব্যবসা ক্রমে হয়ে উঠল ব্যাঙের ছাতা ব্যাঙ্ক। কত লোক টাকা রাখল তাতে চড়া সুদ পাবার আশায়, পলক ফেলতেই টাকা দ্বিগুণ হবার আশায়। কারও কারও আশা পূর্ণও হল। তারা ধরে আনল আরও লোক। ভরা বর্ষার পুকুরের মতো ভরে উঠল ব্যাঙ্ক। তারপর একদিন ভরা পুকুরে ছোঁড়া ঢিলের মতো শব্দ তুলে জল উছলে ডুবে গেল টুপুৎ করে। রাতারাতি নেতা মিলিয়ে গেল হাওয়ায়। তাকে না পেয়ে অত্যাচার চলল নিভারানির ওপর। শারীরিক, মানসিক ক্ষয় শুরু হল। সুযোগ বুঝে যেদিন বাড়ির কাজের লোকেরা অত্যাচার করে সব ছিনিয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিল, ওরা ভাবছিল নিশ্চয় আরও কোথাও টাকাকড়ি গয়নাগাটি নিভারানি লুকিয়ে রেখেছে। ভয়ানক মার মারছিল আর বার বার জিজ্ঞেস করছিল, “বল আর কোথায় কী আছে?” নিভারানি কাকুতি মিনতি করছিল, “আর নেই… আর নেই…”
নিভারানি কোথায় চলে গিয়েছিল তার পর। ব্যাঙ্ক ডুবে যাওয়ার খবর, মন্ত্রী নিখোঁজ হওয়ার খবর জানাজানি হল চারিদিকে। মন্ত্রীর নামে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট বেরোল। ঘুনসির আবার নিভারানির জন্য বড় মন কাঁদল। খুঁজে খুঁজে গেল নিভারানির শহুরে বর্ধিষ্ণু শ্বশুরবাড়িতে। কেমন করে জানি আমগাছে চড়ার অভ্যেস কাজে লাগিয়ে পাঁচিল টপকে, পাহারাদারের চোখ এড়িয়ে ঘুনসি ঢুকে পড়েছিল বাড়ির বাগানে। মন্ত্রীমশাই অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে লুকিয়ে সেদিন বাড়ি এসেছিলেন কিছু লুকোনো দরকারি জিনিস নিতে। ঘুনসিকে দেখতে পায় একটা চাকর। ঘুনসিও দেখতে পায় মন্ত্রীকে। পাঁচিল টপকাবার আগে দেখেছিল মন্ত্রীর বাড়ির গেটের কাছে পুলিশ পাহারা। মন্ত্রী ঘুনসিকে দেখেই চাকরকে বলল, “ধর ওকে।” ঘুনসিরও মাথা ঘুরে গেল, পরিত্রাহি চেঁচাতে লাগল, গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশদের উদ্দেশ্যে, যে মন্ত্রীমশাই বাড়ির ভেতরে আছেন। ওর কেন মনে হয়েছিল যে বাইরের পুলিশ মন্ত্রীর ঘরে আসার খবর জানে না। মন্ত্রী আর সহ্য করল না। নিতে আসা দরকারি জিনিসের মধ্যে থেকে রিভলভার তুলে নিল। ঘুনসি পড়ে রইল মেঝেতে।
ঘুনসির পোড়ো বাড়ির মাথায় আজ বড় সুন্দর চাঁদ উঠেছে। পার্টির কিছু ছেলে মিলে বাড়িটা বাগানোর তালে আছে। আন্নি বুড়ির গত মাসখানেক কী হয়েছে কে জানে। সে আর এখন খুব বেশি ‘আন্নি আন্নি’ বলে না। ঘুনসি বুঝতে পারে আসলে সে বলে, “আর নেই, আর নেই।” জিভ জড়িয়ে যায়, তাই অমন শোনায়। বাসস্টপের পাশের পানাপুকুরে আন্নিবুড়ি স্নান করেছে কয়েকদিন। বস্তা খুঁজে খুঁজে একটা গোটা কাপড় পরেছে দিন পনেরো হল। আজই সকালে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আন্নি বুড়িকে কেমন বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে এসেছে ঘুনসির এই পরিত্যক্ত বাড়িতে। এখানেই থাকার ব্যবস্থা করেছে। কাল নাকি এক ডাক্তারবাবু আসবেন নিভারানিকে দেখতে। কে যেন চিনতে পেরে খবর দিয়েছে মন্ত্রীর বৌয়ের এই অবস্থার কথা। তার পরেই এত তোড়জোড়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজন ওকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল শহরে। কিন্তু কেন কে জানে কিছুতেই ওকে নিয়ে যেতে পারল না। শেষে অনেক চেষ্টায় বাসস্টপ থেকে এই কয়েক গজ দূরে ঘুনসির বাড়িতে আনতে পারল। আজ জোছনা বড় মিঠে। নিভারানি ঘরের মেঝেতে কাঁথা পেতে ঘুমোচ্ছে। খোলা জানলা বেয়ে ওর শরীরের ওপর জোৎস্নার আলোয়ান। ঘুনসি রাত জেগে বাঁশঝাড় দেখে, রুপোলি আলোমাখা উঠোন দেখে। আজ বামুনের মেয়ে ওর ঘরে ঘুমোচ্ছে। বাড়ি বাগানোর তাল করা পার্টির ছেলেদুটো সন্ধেবেলাতেও একবার বাইক নিয়ে ঘুরে গেছে।
পরদিন সকাল সকাল বড্ড তোলপাড় হচ্ছে গঞ্জ। কয়েক মাসের তফাতে দু-জোড়া প্রাণ গেল। একজোড়া আগে পুকুরে ডুবেছিল। এ দুটোও গেল। কী করে কে জানে। পুলিশ তদন্ত করবে। নিভারানিকে দেখতে ডাক্তার এসেছে। ঘুনসির পোড়োবাড়ির ঘর ভরে গাঁয়ের লোক, কাগজের লোক। গুমটির মালিক রতন খুড়ো বিড়িতে টান দিতে দিতে এক সাংবাদিককে বলছেন, “এ শান্তির গ্রামে যে কী দুর্ভোগ লাগল। পর পর এমন মৃত্যু। ছেলেগুলো বদ ছিল, তবু তরতাজা প্রাণ তো। এতকাল তো এই গঞ্জে আছি, ছিঁচকে চুরি ছাড়া, ডাকাত, ভূতপ্রেত কোনোকিছুর উপদ্রব দেখিনি।”
সুতপাদি, ঘুনসির মতো চরিত্ররা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে আবর্তের ঘুর্নিপাকে হাবুডুবু খাচ্ছে…আপনার লেখনী সুপরিশীলিতভাবে তাদের সুখ, দুঃখকে এই সমাজের কাছে উপস্হাপিত করে বর্তমান আধিকারিকের কাছে সঠিক প্রতিকারের আশায়..জানিনা এ সমাজব্যবস্হা কতকাল পরে এদের অবস্হার অনুভুতিতে একাত্ম হয়ে তাদের যথাযথ মর্য্যাদা দেবে…তবুও আশা করি আপনার এই বলিষ্ঠ লেখার মাধ্যমে তারা হয়তো একদিন সুবিচার পাবে….লেন্সের পরে দূরবীনের আশায় রইলাম….